পানির বোতল থেকে শুরু করে বাজারের ব্যাগ, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ— সবকিছুতেই প্লাস্টিকের ছোঁয়া। এক কথায় বলা যায় প্লাস্টিকের জগতে আমাদের বাস। আজকাল বিভিন্ন খাবারেও মিলছে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব। ফলে খুব সহজেই শরীরে প্রবেশ করছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। এমনকী মস্তিষ্কেও তা পৌঁছে যাচ্ছে, প্রাথমিক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। আর তারপর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়াচ্ছে চিকিৎসা মহলে।
গবেষকরা মানব শরীরের ব্রেন, কিডনি আর লিভারের অটোপসি করেন। পরীক্ষা শেষে সবগুলো অঙ্গেই মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৯১টি ব্রেন স্যাম্পলে সারা শরীরের থেকে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে।
এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ২৪টি ব্রেন স্যাম্পলে প্রায় গড়ে ০.৫ শতাংশ প্লাস্টিক রয়েছে। এই তথ্য সামনে আসার পরই চমকে উঠেছিলেন গবেষকরা। তাদের দাবি, এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেহের সবকটি অঙ্গের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণে সবথেকে বেশি জর্জরিত ব্রেন।
ব্রেনের রোগেরও রয়েছে ইঙ্গিত
মানব সভ্যতার আধুনিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের প্রকোপ। প্রশ্ন থাকতে পারে, কেন এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী? এই প্রশ্নেরই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে এই গবেষণা। এক্ষেত্রে গবেষক দল ১২ জন এমন মানুষের মস্তিষ্কের নমুনা গ্রহণ করেছিলেন, যারা ডিমেনশিয়া-অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগ নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেই স্যাম্পল পরীক্ষা করে তারা দেখেন যে, এই মানুষগুলোর ব্রেনে প্রায় ১০ গুণ বেশি প্লাস্টিক ছিল। যা সামনে আসার পর মাথায় হাত পড়ে যায় বিশেষজ্ঞদের।
২০২৪ সালে পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই
এই গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে গ্রহণ করা নমুনার তুলনায় ২০২৪ সালে গ্রহণ করা ব্রেন স্যাম্পলে অনেক বেশি পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। আর এই তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে কীভাবে প্লাস্টিকের দূষণের ফাঁদে পড়ছে মানব সভ্যতা। ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্ককেও গ্রাস করে নিচ্ছে এটি। তাই এখন থেকেই সাবধান হওয়া জরুরি।
গবেষণাকারী দলের প্রধান কী বলছেন?
ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর টক্সিকোলজি ও ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক, এই গবেষণা দলের প্রধান ম্যাথিই ক্যাম্পেন বলেন, আমাদের গবেষণা চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য সামনে এসেছে। আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না যে এতটা পরিমাণ প্লাস্টিক ব্রেনের মধ্যে উপস্থিত পারে। এবার বোঝার বিষয় হলো, ঠিক কতটা পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক মস্তিষ্ক সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি প্রিপ্রিন্ট স্টাডি। অর্থাৎ এখনও এই গবেষণার পিয়ার রিভিউ হয়নি। এমনকী এটি কোনো জার্নালে প্রকাশও পায়নি। পাশাপাশি মাইক্রোপ্লাস্টিক যে ব্রেনের কতটা ক্ষতি করতে পারে, এই বিষয়টি সম্পর্কেও তেমন কিছু খোলসা করতে পারেনি গবেষণাটি। এই বিষয়ে আরও স্টাডি দরকার। এরপর পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যাবে।
তাই আপাতত খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই। বরং প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এতেই বরং সুস্থ থাকা সহজ হবে।