নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের জনসভায় কর্মীদের উৎসাহে ভাটা দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাজী মনিরের আওয়ামী লীগ প্রীতি এর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন দলটির কর্মীরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় সমাবেশস্থলে স্টেজের সামনে হাতেগোনা নেতাদের ও তাদের সমর্থকদের দেখা যায়। সমাবেশের পুরো এলাকা জুড়েই ছিল সারি সারি ফাঁকা আসন। আন্দোলন সংগ্রামের উত্তাল সময়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন মনির। মূলত একারণেই মনিরের ডাকে সাড়া দিচ্ছেনা রূপগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির বেশ কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের নেতার সাথে কথা বললে তারা জানান, বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে কাজী মনির ছিলেন নিষ্ক্রিয়। দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও নিয়মিত থাকতেন না মনির। আন্দোলন সংগ্রামেও মাঠে ছিলেননা মনির। ৫ আগষ্টে সরকারের পতনের পর এখন সক্রিয় হতে শুরু করেছেন মনির। তিনি এমপি হতে চান। তবে দেশনায়ক তারেক রহমান বহু আগেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, যারা মাঠে থাকবে নেতৃত্ব দিবে তাদেরকেই ভবিষ্যতে মূল্যায়ন করা হবে।
৫ আগষ্টের পর থেকেই কাজী মনিরের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডকে ঘিরে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীদের পক্ষ নিয়ে মনিরের একের পর এক বক্তব্য এই ক্ষোভের কারণ।
গত ২৬ আগষ্ট রূপগঞ্জে অবস্থিত গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান কাজী মনির। এসময় গাজী টায়ারস ফ্যাক্টরি রক্ষার জন্য চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেন মনির।
এসময় কাজী মনির বলেন, গাজী সাহেব অন্যায় করে থাকলে তার সাজা হবে, আইন তার বিচার করবে। কিন্তু তার কারখানা পুড়ে তো তাকে সাজা দেয়ার দরকার নেই। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই আমাদের পক্ষ থেকে এটা রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার আমার করবো।
এছাড়াও লুটপাটের ঘটনার জন্য চনপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দায়ী করেন কাজী মনির। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে চনপাড়ার মানুষ। মনিরের বিরুদ্ধে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল বের করেন স্থানীয়রা। এসময় তার কুশপুত্তলিকা দাহ্ করা হয়।
জানা গেছে, গাজী টায়ার ফ্যাক্টরি রক্ষা করতে ৫ তারিখের পর থেকেই কাজী মনির সোচ্চার হয়ে ওঠেন। সেসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মী ও নিজের বেশ কয়েকজন অনুসারীকে ফ্যাক্টরিটি রক্ষার দায়িত্ব দেন মনির। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
সর্বশেষ গত বুধবার রূপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করেন কাজী মনির। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বলেন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাকে পারিবারিক ভাবে ব্যাবহার করতে চেয়েছে।
গাজীর মত অত্যাচারীর জন্য কাজী মনিরের এমন মায়া কান্নায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে রূপগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলটির মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা অত্যাচার সহ্য করেছি। বাড়িতে থাকতে পারিনি। কাজী মনির সাহেব তো এত বছর বহাল তবিয়তে ছিলেন, ব্যাবসা করেছেন। রাজনীতি থেকে দূরে ছিলে। আজ আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি সক্রিয় হয়েছেন সেসকল পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন করতে।
রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০২২ সালে বিএনপির উত্থান ঘটলে সুবিধাজনক অবস্থান নেন কাজী মনির। ঢাকার কিছু কর্মসূচিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করলেও নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের রাজনীতিতে ছিলে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সময় সময়ে গাজীর রোষানলে পড়লেও কাজী মনিরকে কোন দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।